লিখেছেন- রওশনারা বেগম
একটা মানুষকে কেটে টুকরো টুকরো করে সমালোচনা করার দরকার নেই। এতে তার মধ্যকার ভাল যা কিছু আছে তাও অবহেলার মধ্যে চলে আসে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয়, যখন তার কোন কর্ম নিয়ে বিতর্ক হয়। যতো সময় পর্যন্ত তা না হচ্ছে ততো সময় পর্যন্ত তা সমালোচনার বাইরেই থাকুক।
সৃষ্টিশীল মানুষের সৃষ্টির নির্যাসটুকু নেবার ক্ষমতা অনেকের মধ্যে থাকে না। একই গান আমিও শুনছি অন্য আরেকজনও শুনছে। আমার কাছে যে অনুভূতিতে ধরা দেয় তা অন্যের কাছে আরো ভিন্ন ভাবে ধরা দেয়। একটা গল্প আমাকে যে ভাবে নাড়া দেয়, অন্যকে তা নাও দিতে পারে। কেন এমন? বোধেরও একটা গভীরতা রয়েছে। কেউ এর তলকে ছুঁয়ে একেবারে ভিতরে ডুব দিয়ে এর সুক্ষ অনুভূতিকে আলিঙ্গন করতে পারে। কেউ হয় তো এর মাঝামাঝিতে যেতে পারে আবার কেউ হয় তো তাও পারে না। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনটি জিনিসের খুব দরকার কোন কিছুর আঁকার দিতে গেলে। ভাব,ভাষা আর ভঙ্গি। এই তিনটির মিশ্রণে একটা নতুন কিছু তৈরি হয় যা একজন কবি সাহিত্যিক বা শিল্পীর সৃজনশীল কর্ম।
একেক জনের প্রকাশ ভঙ্গি একেক রকম। এই প্রকাশ ভংগির মধ্যে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। একটা বিশাল আকৃতির বস্তুর খুব ক্ষুদ্র জায়গায় দাড়িয়ে তার বিশালত্বের বোধটি নিজের মাধ্যে কতটা আনা যায়? খুব ক্ষুদ্র জায়গায় দাড়িয়ে আমরা আসলে খুব বড় বড় জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করি। এই বড় জিনিসটাই হলো নানা অনুভূতির গভীরতার। কেউ এটিকে ভাষা দিয়ে মূর্ত করে তোলার চেষ্টা চালায়, কেউ এটিকে নানা রং দিয়ে সামনে আনে, কেউ এটিকে আঁকার দিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা করে যায়। এই সবই আসলে নানা অনুভূতির ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশের খেলা।
ঠান্ডার দেশে থেকে আমরা এই ঠান্ডার এক বৈচিত্রময় রূপকে দেখতে পাই। অনেক দিন সামার কাটার পরে আমরা অপেক্ষায় থাকি কখন তুষার পড়া দেখতে পাবো। এই তুষারপাতের দৃশ্যটি দেখার মত অপূর্ব। আমি প্রায় রাত জেগে এই স্নো পড়ার দৃশ্যটি দেখি। সেই রাতে আর অন্ধকার থাকে না। অদ্ভুত আলোয় চারিদিকে আলোকিত হয়ে উঠে। চাঁদনী রাতের মতই আরেকটি অপূর্ব রূপ। এই আলোয় স্নান করতে কেহ কেহ ঠান্ডাকে কেয়ার না করে বের হয়ে যায়। সেই দৃশ্যটি আমি অনেক দেখেছি। শীতের প্রথম স্নো পড়াটা বড় উৎসব বটে। আমি বাচ্চাদের চিৎকার শুনি, আনন্দের চিৎকার। আর এই স্নো নিয়ে অনেক কবিতা গল্প জড়িয়ে আছে এই সংস্কৃতিতে। সামার শেষ হবার পথে ফল আসে। এই সময়ে গাছের পাতাগুলো এক এক করে সব ঝরে যায়। গাছগুলো উলঙ্গ হয়ে শীতের প্রতীক্ষায় দাড়িয়ে উষ্ণ আলিঙ্গন দেয়। এটি এক অপূর্ব দৃশ্য। সেই ঝরা পাতার মধ্যে চলে আরেক খেলা। চারিদিকে পাতায় পাতায় ভরে যায়। গাছগুলো পুরাতন পাতা ঝেড়েফেলে নিজেকে নতুন ভাবে প্রকাশ করে তোলে।
অক্টোবরের শেষে শুরু হয় বাচ্চাদের হেলোইন উৎসব। এই সবের মধ্য দিয়ে জীবনের একেকটি দিন সরে যাচ্ছে। এই ভাবেই আমাদের বয়স বাড়ছে। ঝরা পাতার মত আমরাও আস্তে আস্তে ঝরে যাচ্ছি। একটা জন্মদিন মানে জীবন থেকে একটি বছর ঝরে যাওয়া। আর সেটাই আজ আমাদের উৎসব। কী অদ্ভুত এক খেলা!! তবুও এই জীবনের সব কিছু উৎসব হয়েই থাকুন। উতসবে ভরে উঠুক এই জীবন। মৃত্যু কী তাহলে উতসবের মধ্যে আসে না? তা হয় না। এতে তো জীবনের সমাপ্তি ঘটে।