লিখেছেন- রওশনারা বেগম
মানুষ সব সময়ে সামনের দিকেই এগিয়ে যায়। আমরা কী সামনের দিকে এগিয়ে চলছি? আমাদের রাজনীতি কী বলে? স্বাধীনতার পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। তারা মানুষকে কতটা শান্তিতে রাখতে পেরেছিল তা বলতে চাইনা। তারাই বিএনপি নামে একটা ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে সামনে আসার পথ তৈরী করে দেয় । ফলে রাজনীতিতে ধর্ম ভাল ভাবে জায়গা করে নেয়। রাষ্ট্রদ্রোহি গোলাম আযমরা রাজনীতিতে ভাল ভাবে বসে যায়। এর পর এরশাদ এসে সেটিকে আরো পাকাপোক্ত করে।
একদলের ব্যর্থতায় আরেক দলের সৃষ্টি। তবে এই নতুন সৃষ্টিতে একটা পিছনের দড়ির টান রয়েছে। সেখানে বামরা কোথায় ছিল? যে বাম রাজনীতির ধারা জেগে উঠেছিল স্বাধীনতার পূর্বে, তাদের অস্তিত্ব কোথায় হারিয়ে গেল? বামদের ধ্বংসের পিছনে কারা বেশি অবদান রেখেছিল? প্রগতিশীল বাম রাজনীতিকে কেউ আশ্রয় দেয়নি। স্বাধীনতার পর তাদেরকে সবাই একটু একটু করে মেরেছে। যে রাজনীতি মানুষকে সামনের দিকে চালিত করে, সেই রাজনীতি দিনে দিনে পিছনের দিকে হটেছে। তাহলে মানুষের যাত্রা কোন দিকে হবে তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ আমরা যতোই চিতকার করি না কেন কোন লাভ নেই। ৪৫ বছরে যেখানে রাজনৈতিক মুক্তি যেখানে আসেনি সেখানে মানুষের মুক্তি আসবে কেমনে?
সব ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা রাজনীতির মাঠে ধর্মের খৈ ফুটিয়ে ব্যবসা করেছে। আজ সেই ব্যবসা ফুলে ফেঁপে অনেক মহীরুহ হয়ে অক্টোপাসের মত সবাইকে জড়িয়ে রেখেছে। এর থেকে রক্ষা এত সহজ নয়। কর্নেল তাহেরের মত মানুষরা স্বাধীনতার পর একা একা চেষ্টা করে গিয়েছিল প্রগতিকে তুলে ধরার। কোন ক্ষমতাসীন শাসক তার পাশে ছিল না। যে দেশের শাসক বীর নেতাকে ধ্বংস করে সে দেশের মুক্তি আসে না। সময়ের সাথে সাথে পরাধীনতার নানান রূপ নেয় মাত্র। মুক্তি সে সারা জীবন অধরাই থেকে যায়। বীর নেতাকে চিনতে খুব বেশি জ্ঞানের দরকার পড়ে না। ক্ষমতার লোভে রাজনীতিবিদরা এই সব বীরদের এক এক করে ধ্বংস করে দেশদ্রোহি মানুষদের স্বাধীন দেশে বৃক্ষ রোপণের সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলাফল আজকের এই বাংলাদেশ।
বাংলার সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তন তা সামনে চলার কোন পরিবর্তন নয়। আজ দেখি আমাদের মেয়েরা মাথায় রংবের রং এর কাপড় মুড়িয়ে গোলাপ ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে। সত্যি কী এর মধ্যে সুবাস রয়েছে? আমি এর মধ্যে সৌদি ঢঙ্গের গন্ধ পাই। আগে আমাদের মায়েরা মাথায় সামান্য কাপড় রাখতো। অতিরিক্ত রেখে ঢেকে রাখার প্রবণতার কোথার থেকে এসেছে? এটি তো আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নয়। এটি বুঝার মত জ্ঞান কী আমরা হারিয়ে ফেলছি?
আমাদের মূল সংস্কৃতিকে ফেলে দিয়ে যে অন্যের অনুকরণে আধুনিকতা ভেবে গায়ে জড়িয়ে জীবন চর্চায় লিপ্ত হয়েছি তা আমাদেরকে পশ্চাতেই ধাবিত করবে। এখন অধিকাংশ মানুষ গান পছন্দ করে না। নাচকে হারাম মনে করে। সব কিছুর মধ্যে ধর্ম এনেছে। ইহোজগতে বাস করে পরকালগত ভাবধারা নিয়ে আধুনিক হওয়া যায় না। যারা এটির চেষ্টা করে তাদের মধ্যে ভন্ডামী রয়েছে।
একজন বিজ্ঞানী যখন কুরান হাদিসের বাণী দেন তখন তাকে আর বিজ্ঞানী বলা যায় না। বিজ্ঞানের কাজ তো ইহোজগত নিয়ে। যে সমাজে যুক্তির স্থান নেই সেখানে হয় তো বিজ্ঞানীতে ধার্মিক হওয়া লাগে, শিল্পীকে মাথায় ধর্মীয় টুপি দেওয়া লাগে, গানে জেকের করা লাগে, নাচে শিল্পীর শরীরে অনেক পর্দার ব্যবস্থা করা লেগে, শিল্প কলার থেকে নারীকে দূরে রাখতে হয়, ভাস্কর্য শিল্পে নারীকে বিলুপ্ত করা লাগে। এটাই হলো ধার্মিক জীবন বোধ। এটা কী করে প্রগতি হবে? আমার জানা নেই।