লিখেছেন- ফারিসা মাহমুদ
হিজাব আমি একদমই পছন্দ করি না। আমার ধারনা এই গরমের দেশে মন থেকে ধর্ম ভালোবেসে হিজাব পরে এমন কেবল হাতে গুণা দুই, চার জন । হিজাব যারা করে ওদের অবশ্যই অন্য কোন কারন আছে। হয় বাবা বা স্বামী হিজাব পরতে বাধ্য করে, না হয় অন্যের চোখে ভালো বা ধার্মিক থাকা জরুরী, স্টাইল, পাকা চুল ঢাকতে, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি নানা কারন। কিন্তু ধর্ম ভালোবেসে না। এবং এইটা কোনদিন কোন মেয়ে স্বীকারও করবে না। এবং যারা হিজাব পরে ওরা আমার মত যেমন ইচ্ছা তেমন পোষাক পরা মেয়েদের ঈর্ষা করে বলেই আমাদের সম্পর্কে আজে বাজে কথা বলে। এই ঈর্ষাই প্রমান করে ওরা নিজের ইচ্ছায় হিজাব পরে না।
যেহেতু আমি হিজাব পছন্দ করি না, আমিও হিজাব পরা মেয়েদের নিয়ে নানা রকম কথা বলি। আগে আমি কেন পর্দা করা পছন্দ করি না সেটা বলে নেই। পর্দা কেন? পুরুষের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে। নারী শরীর দেখে পুরুষের কামনা বাসানা জাগবে। তাতে আমার মানে নারীর কি? কামনা বাসনা যার পাপ পূন্যও তো তারই হওয়া উচিত। আমার চোখ তো খোলা, শরীর কেন ডাকবো? চোখে পুরুষ দেখে আমারো কামনা বাসনা হতে পারে। পুরুষ কি পর্দা করে? অপ্রয়োজনীয় একটাও বেশী কাপড় কি তারা পরে?
পুরুষের কামনা জাগ্রত হবে এবং তা জাগ্রত করার জন্যে পাপও আমারই হবে ! আমি এই নিয়ম মানি না। আমার জন্মেও কোন পুরুষ দেখে কামনা জাগে নাই আমাকে দেখে কার কি জাগলো তা নিয়েও আমার মাথা ব্যাথা নাই। পুরুষ বেহেস্তে যেয়ে হুরের কোলে শুয়ে আঙুর ফল খাবে সেই জন্যে এই গরমে আমি কাপড়ের উপরে কাপড়, তার উপরে আরো কাপড় পরে কষ্ট করতে পারবো না।
আমার একজন বন্ধু আছে। বেশ পুরনো বন্ধু। প্রায় ১৭/১৮বছর আগে যখন তার সাথে আমার বন্ধু হয় তখন সে পর্দানশীন ছিলো না। এখন সে খুব পর্দা করে এবং এখন তার অনেক টাকাও হয়েছে । হঠাৎ টাকা হলে মানুষ হঠাৎ ধার্মিকও হয়ে যায়। সে ভোরে হাটতে গেলেও জামার উপরে একটা আলখাল্লা পরে।আমার তাতে সমস্যা নাই। আজকাল তো আমার পরিবারের মধ্যেও অনেকেই হিজাবধারী, কেবল আমি আমার বোন, আমার ভাবীরা ছাড়া প্রায় সবাই। ও, মামনিও হিজাব করত না। নিজের আত্মিয় স্বজনই হিজাব করে তো কাকে আর কি আর বলবো !
সেই পর্দানশীন বন্ধু একদিন দেখি আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে। পুরনো বন্ধু এফবিতে ওর ছবি টবি দেখতাম, ভাল লাগতো। বিষয় কি? পরে জানতে পারেছি ওর মেয়েরা আমাকে আনফ্রেন্ড করতে বলছে কারন আমি নাস্তিক। মনটা এমন খারাপ হয়েছে ! বন্ধুর চেয়ে বড় হয়ে গেলো নাস্তিক না আস্তিক ?
আজকাল দেখি চারুকলায়ও হিজাব পরা মেয়েতে ভর্তি। শুধু মেয়েই বা কেন বলি, হুজুরও দেখা যায়। তার মানে কি? ইসলাম চর্চাটা এই লেভেল পর্যন্ত চলে আসছে। এইটা তো একটু শংকার কথাই। এই বিষয় নিয়েই আলাপ করছিলাম জয়ের সাথে । জয় নামে কয়েকজন বন্ধু আছে। এহসান হাফিজ হচ্ছে এই জয়। ওর সাথে আমি সব রকম কথা বলতেই খুব কমফোর্টেবল । ও আমার লেখা গুলো সম্পাদনা করে ফলে আমার ভাবনার জয়গাটায় সে খুব ভালো ভাবে পৌঁছাতে পারে। জয় আমাকে তখন খুব গুরুত্বপূর্ন একটা কথা বলেছে। যা শুনে আমি অনেক্ষন কিছুই বলতে পারিনি। ও বলছিলো, তুমি ও তো তাই করছো যা হুজুররা বা জামাতরা করে।
যার ইচ্ছে সে হিজাব পরবে, যার ইচ্ছে সে কাপড় না পরে ঘুরবে। তুমি তো এই নিয়ে কিছু বলতে পারো না। তোমার ভাল্লাগে না তাই বলে কেউ হিজাব পরবে না? ওরা সবাইকে হিজাব পরাতে চায়, তুমিও হিজাব না পরাতে চাও, তবে তোমার আর তাদের পার্থক্য কই ? প্রতিক্রিয়া তুমিও দেখাচ্ছো।
পার্থক্য আছে। আমি ভিন্ন মত গ্রহন করতে পারি। তাকে অনেক ক্ষেত্রে নিজের মতামত থেকে বেশী গুরুত্ব দেই। কারন ভিন্নমত ছাড়া আমার মতামত গুরুত্বহীন।
হিজাব শুধু হিজাব না। হিজাব হচ্ছে আড়াল করা। আড়াল করা মানেই স্বচ্ছতার আস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়া।একবার আমি রাস্তায় হিজাব পরা হিজরাদের কথা লিখেছিলাম। তখন একজন কমেন্টসে লিখেছিলো ওরা নকল হিজরা। পরে আমি খোজ নিয়ে জেনেছি ঘটনা সত্যি। রাস্তায় হিজাব পরে চাঁদা উঠায় এমন কিছু হিজরাকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার জন্যে যখন স্বাস্থ্য পরিক্ষা করিয়েছে তখন বের হয়েছে এরা পুর্নাঙ পুরুষ।
পথে বের হলেই দেখি হিজাব পরা মেয়েতে ভর্তি। প্রতি দশজন মেয়ের মধ্যে ৭/৮জনই হিজাব পরে। সত্যিকারের যদি মানুষ এত ধার্মিক হত তাহলে অন্তত নৈতিকতার এমন অবক্ষয় দেখতে হত না। সব ধর্ম তো নৈতিকতার কথা বলে, তাই না?