মেয়েমানুষ, বীর ও বেয়াড়া সূর্য্যটা


khali

লিখেছেন- শাখা নির্ভানা

 

পাখীর বাসার মত ছোট সারি সারি ঘর। বাম সারি ডান সারি দুই পাশে অগুনিত ঘর, কংক্রিটের নরক। সারিগুলোর মাঝখান দিয়ে সরু করিডোর। ঘরগুলোয় কোন জানালা নেই, তবে করিডোরের এক্কেবারে শেষ মাথায় একটা ছোট্ট জানালা। সেখান দিয়ে সূর্য্য আসে না, আসে তার ছায়া আলো আধারী মিশিয়ে। এই ব্যবস্থা কয়েদিদের জন্য- যেন তারা বেয়াড়া সূর্য্যটাকে ছুয়ে ফেলতে না পারে, না পারে জ্বলে উঠতে- তারই জন্যে এই কৌশল।

অস্থায়ী জেলখানা এটা। জেলখানার ছোট্ট একটা কবরে তেইশ নম্বর কয়েদি মিস জাহানারা বসে আছে সজাগ। তার হাত-পা-চোখ-মুখ সব সজাগ- সজাগ তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়। তার কানে একটা আওয়াজ এলো এইমাত্র- একটানা আওয়াজ- ভারী বুটের মচমচ খটখট শব্দ, যেমন আসে প্রতিদিন ভোরে ঠিক এই সময়ে। সূর্য্যের হালকা ছায়ার ভেতর দিয়ে ভারী জীবন্ত কোন প্রাণী এগিয়ে আসছে তেইশ নম্বর রুমের দিকে। সেই একই শব্দ, সেই একই গন্ধ, সেই একই ছায়া- মিস জাহানারা আরও সজাগ হয়। চকিতে তার আঙ্গুল হয়ে যায় চিরুনীর দাত- তা দিয়ে চুল গুলো আচড়ে ফেলে সে। হাতের আঙ্গুলের ডগায় থুথু লাগিয়ে ভ্রুজোড়া পরিপাটি করে, মলিন নখগুলোও মেজে নেয় মিস জাহানারা। এক সময় তেইশ নম্বর ঘরের সামনে এসে সব আওয়াজ থেমে যায়। ঘরে ঢোকে বালুচ ক্যপ্টেন। স্বীকারোক্তি তার চাইই। সেই একই মুখ, একই গলার আওয়াজ, সেই একই বাঁকা প্রশ্ন। পুরু পাথরের গোপ, আর পাথরের মুখের ভেতর থেকে তার বেরিয়ে আসে শব্দ বাক্য আর পরিত্যাক্ত বাগধারা।

-তারপর, মিস জাহানারা, সেদিন তাহলে আপনাকে শেষবারের মত কোথায় পাওয়া গিয়েছিল?
-আমাদের বুঝা উচিত, আমরা একজন নারীর সাথে কথা বলছি।
কয়েদীর কথার ব্যকরন পরিস্কার, তবে তার চোখের দৃষ্টিতে কি যেন এক অচেনা আলোর আসা যাওয়া।
খুব ভারী একটা ঘুষি এসে পড়ে কয়েদির মুখের উপরে চকিতে। চোয়ালের হাড় ভেঙ্গে কয়েকটা টুকরো হয়। সেগুলোর শব্দ আর ব্যথা টের পায় মিস জাহানারা।
-সেদিন তাহলে আপনাকে কোথায় পাওয়া গিয়েছিল, মিস জাহানারা?
-আমাদের বোঝা উচিত, আমরা একজন নারীর সাথে কথা বলছি।

চোয়াল ভাঙ্গা কয়েদির আবারও নির্ভয় উত্তর। চোখে তার তখনও অচেনা স্বপ্ন, তবে সেটার কোথাও ভাঙ্গা নেই- একেবারেই নিরবিচ্ছিন্ন সেটা। অবাধ সূর্য্যের স্বপ্ন সেটা। ভুলে একবার তাকায় কয়েদি করিডোরের শেষ প্রান্তের জানালাটার দিকে, যেখান দিয়ে প্রতিদিন এসে ঢুকতো সূর্য্যের ছায়া। অবাক হয়ে দেখলো কয়েদি, আজ সেখানে ঢুকে পড়েছে আস্ত সূর্য্যটা নুহু নবীর সর্বগ্রাসী প্লাবনের মত।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s