কাব্য যেখানে সীমাবদ্ধ


final

লিখেছেন- রওশনারা বেগম

 

গতকাল আমার এক বন্ধুর স্ট্যাটাসে জানতে পারি, পুরুষ কবিরা নারীর দৈহিক সৌন্দর্য বর্ণনা দিয়ে কবিতা লিখে, কিন্তু নারীরা পুরুষের শারীরিক সৌন্দর্য্য নিয়ে কবিতা লেখে না। তাদের অধিকাংশ কবিতার উপজীব্য পুরুষ থেকে আলাদা। তারা নারীর সৌন্দর্য্য নিয়ে লিখলেও পুরুষের শারীরিক সৌন্দর্য্যকে কবিতায় আনতে ব্যর্থ। নারীর চোখে সৌন্দর্য্যের সীমানা সীমিত হয়েছে নানা কারণে। সামাজিক অবস্থা আমার মনে হয় এর পিছনে কিছুটা কারণ হিসাবে কাজ করছে।

আমি যখন কলেজে পড়ি তখন আমার মনে পড়ে আমার এক বান্ধবীর কথা। নামটি মনে নেই, তবে তার কথাগুলো আমার আজও মনে আছে। সে আমার কাছে এক পুরুষের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দিয়েছিল। পুরুষের ঘন দাড়ি যখন সেভ করা হয় তখন শ্যামলা, অথবা একটু ফর্সা বর্ণের পুরুষের মুখে একটা হালকা সবুজ বর্ণের আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে অদ্ভুত একটা সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি হয়, যা নারীকে খুব আকর্ষণ করে। এই সত্যটি আমার বান্ধবী খুব অবলীলায় বলেছিল। আরেকটি জিনিস সেটি হলো, সেভিং লোশনের সুগন্ধ যা অনেক নারীকে খুব আকর্ষণ করে। এ তো গেলো সামান্য কিছু। শারীরিক অবয়ের সুঠাম গঠন, সৌর্য ও বলিষ্ঠ দেহভঙ্গি, যা দেখে নারী খুব গোপনে তাকিয়ে থাকলেও মুখে কোন কথা বলে না।

image003

নারী কবি সে তো আমাদের সমাজে আজও খোলামেলা হতে পারেনি। সেখানে পুরুষের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দেবে কী ভাবে? যৌনতাকে আমারা আজও শিল্প ভাবতে পারি না, অথচ পশ্চিমাতে এটি অনেক আগেই শিল্পে উপনীত হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন শিল্পের একটা পরিমিতি বোধ থাকা উচিৎ। কিন্তু কে বেঁধে দেবে এই পরিমিতির সীমানা। কোন দিকে হেলানো তার চিন্তন বা বোধ- ডান, বাম নাকি অন্য কোন দিকে? তাই স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এর তারতম্য দেখতে পাই। নারীর যৌন আকর্ষণের মাত্রাটা পুরুষের থেকে কিছুটা কম প্রকৃতগত ভাবে। এজন্য হয়তো নারী কবিদের লেখায় তা তেমন ভাবে ফুটে উঠে না।

যাপিত জীবনের নানা দিক কবিতায় চলে আসে, সেই হিসাবে পুরুষের প্রতি নারীর যৌন আকর্ষণও আসা উচিৎ নিজস্ব সাংস্কৃতির উপর ভর করে, কিন্তু তা আসে না। এর কারণ মনে হয় সামাজিক অবস্থার পাশাপাশি ধর্মীয় অবস্থাও। মেয়েদের সামান্য খোলামেলা লেখা অনেকেই সহজ ভাবে নিতে পারে না, সেখানে কবিতায় পুরুষের দৈহিক সৌন্দর্য্যের কথা কী ভাবে আসবে? এ তো গেল কবিতা। শিল্পের অন্যান্য আরও দিক রয়েছে, সেখানে তাকালে সেই একই চিত্র পাওয়া যায়।

শিল্পের কোন সীমানা নেই, বা থাকা উচিৎ নয়। এটি একান্ত আমার মত। গ্রীক ভাস্কর্যের দিকে তাকালে আমরা নারী পুরুষ উভয়ের শারীরিক সৌন্দর্য্যের নানা রূপ দেখতে পাই। আমরা সমাজ বাস্তবতাকে আজ পোশাকে বন্দি করে রেখেছি প্রথা দিয়ে। নারীর স্বাধীনতাই যেখানে প্রতিষ্ঠা পায়নি, সেখানে নারী কবির লেখার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র তৈরী হবে কী ভাবে? মুক্ত সমাজে মুক্ত মানুষ তৈরী হয়। শিল্পীর স্বাধীনতা শিল্পী তৈরী করে নিতে পারে নানা উপায়ে, যা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s