লিখেছেন- শেখ খলিল শাখা নির্ভানা
সংখ্যাগুরু মানুষের চর্চা মানে বিশুদ্ধ কিছু, এমন নয়। বিশুদ্ধতার যাচাই করা যায় বিজ্ঞান ও দর্শনের যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে। যেমন ধরা যাক পাপের কথা। পাপের ধারণাটা এসেছে ধর্ম থেকে। বিজ্ঞান ও দর্শনের তর্কের মাধ্যমে এসেছে অপরাধের ধারণা। মানসিক নির্যাতন ও ইহলৌকিক স্বার্থহানীর নাম অপরাধ। পক্ষান্তরে পাপ পরলৌকিক স্বার্থ, ও সেই পরলৌকিকতার কারণে ইহলৌকিক যুক্তিহীন বিশুদ্ধতার প্রতি সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়। পাপ অনেক ইহলৌকিক স্বার্থহানীকে গুরুত্বহীন করে দেয়, শুধুমাত্র ধর্মের কারণে। যেমন ধর্ম ত্যাগ করলে মেরে ফেলা যাবে, বা ভিন্নধর্মীদের সম্পদ লুট করা যাবে স্বধর্মের প্রাধান্য বিস্তারের জন্যে।
আবার ধর্মীয় বিশুদ্ধতাও যৌক্তিক বিশুদ্ধতা থেকে ভিন্ন। জাত যাওয়া, বা ধর্মত্যাগী মানুষকে বিশুদ্ধ হতে হবে গবর খেয়ে, যা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষনের দৃষ্টিতে একটা একটিভ প্যাথোজেন। তাই পাপ একটা ধর্ম ব্যবসার সক্রীয় উপকরণ। যেখানে অপরাধের ধারণা ও আইন রাষ্ট্রিয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত, সেখানে পাপের ধারণাটা অপ্রয়োজনীয়, অতিরিক্ত ও ফালতু।
এবার আসি যৌনতার বিষয়ে। যৌনতার বিষয়ে ধর্ম সবচেয়ে বেশী স্পর্শকাতর। যৌনতার চারটা পর্যায় রয়েছে- সংখ্যাগুরুর চর্চা, অপরাধ, পাপ ও ন্যুইসেন্স বা দৃষ্টিকটু। যৌন অপরাধের তালিকা কমন সেন্সেরর থেকেই তৈরি হয়ে যায়, তা এত জটিল কিছু নয় যে নানান তত্ত্বের অবতারণা করতে হবে। sex bully, undue sexual orientation, sexual persicution, pedofile, insest, rape, ইত্যাদি যৌন অপরাধের বিষয়গুলো যদি আমরা বুঝি তাহলে, পাপের অসারতার বিষয়ে আমাদের ধারণা জন্মাবে।
বহু ক্ষত্রে দেখা যায় ন্যুইসেন্স বা দৃষ্টিকটু বিষয়ও পাপের তালিকায় চলে যায়। যেমন প্রকাশ্যে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার চুম্বন শৃঙ্গার পাপ। যৌনতার ক্ষেত্রে menistrual mating, masturbation বড় পাপ এবং তার প্রায়শ্চিত্তও রয়েছে। কিন্তু অপরাধ বিজ্ঞান, দর্শন বা সাধারণ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তা তেমন সামাজিক স্বার্থহানীকর বা ক্রাইম নয়।
একটা দৃষ্টান্তের অবতারণা এখানে না করলেই নয়। গ্রীষ্মের দিন। সময় সকাল সাড়ে দশটা। টেক্সাসের ব্যাস্ত হাইওয়ে দিয়ে বহু লোক তাদের গাড়ি ছুটিয়ে চলেছে কর্মস্থলে। হঠাৎ করে একটা ২০/২২ বছরে মেয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে, গায়ের সব কাপড় খুলে উলঙ্গ হয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী এবং নগ্ন। ধাবমান গাড়িগুলো ধীর গতি হতে হতে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, আরকি। পাঁচ মিনিটের ভিতরে পুলিশ এসে মেয়েটিকে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় থানায়। সেখানে চলে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ বের করার চেষ্টা করে, সে কোন এক্টিভিস্ট কিনা। পরের দিন একটা চার্জশীট দিয়ে পাঠিয়ে দেয় কোর্টে। খুবই সাধারণ কেস। প্রায়ই আসে এইসব হাস্যকর কেস কোর্টে। জজ সাহেব কফি নিয়ে রিল্যাক্স করে বসেন। জজ সাহেব নিজেই প্রশ্ন করেন- কেন তুমি নগ্ন হলে? মেয়েটি উত্তর করে- আমার গরম লাগছিল। আমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি নেকেড হয়েছি। তাতে কার কি! আমি তো কাউকে আমার দিকে তাকাতে বলিনি। জজ সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন- তুমি কি জান না এটা একটা পাবলিক ন্যুইসেন্স? জানি, তবে আই ডোণ্ট কেয়ার। কারণ আমার শরীরে যা আছে, তা তো সবার শরীরে আছে। তাকে কেন আমি ঢাকতে যাবো? আমি কি কাউকে আমার দেহ দেখার জন্যে গাড়ি স্লো করতে বলেছি? জজ সাহেব মেয়েটির এই প্রশ্নের আর কোন উত্তর দিতে পারেন না বা দেন না। কারণ তার কাছে এটা একটা অনাবশ্যক, ফানি কেস, যা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। মেয়েটা জজ সাহেবের কাছ থেকে গ্রাণ্ডপা টাইপের কিছু উপদেশ ঝুলিতে ভরে নিয়ে কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে। এই মেয়েটা ইরানে অথবা সৌদিয় আরবে হলে নিশ্চিত শরিয়ার কবলে পড়ে কোতোল হয়ে যেতো, যে শরিয়া উঠে এসেছে পাপের ধারণায় বদ্ধমূল হয়ে ধর্ম থেকে। উদাহরণ দিলে এমন আরো বহু বিষয় পাওয়া যাবে, যা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের আওতার অনেক নীচে অবস্থান করে। তাই বলা যায় পাপের ধারণা ধর্মউদ্ভুত একটা টোটালিটেরিয়ান উপাদান, যা দিয়ে মানুষকে বেঁধে ফেলা যায় এবং ধর্মব্যাবসা চালিয়ে যাওয়া যায় নির্বিগ্নে।