হর্ফুনমৌলা কেন হব না!


final

লিখেছেন- রওশনারা বেগম

 

যে কোন কাজকে ছোট করে দেখার প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মজ্জাগত অসুস্থতা। সেই অসুস্থতা তারা পশ্চিমের সভ্য দেশগুলোতে মননে মগজে করে বহন করে এনেছে। আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে মজাদার নানা পদের রান্না করি সপ্তাহে দুদিন। প্রয়োজন হলে আমরা বাবুর্চি হই, প্রয়োজনবোধে ভাল ক্লিনিং-ম্যান হই, প্রয়োজনবোধে আমরা টেকনিশিয়ান হই, প্রয়োজনবোধে টিউটর হয়েছি, প্রয়োজন বোধে হাসপাতালের সমাজ কর্মী হয়েছি। প্রয়োজন বোধে ছাত্র-ছাত্রী হয়েছি। আজও তাই। এই ২০ বছরে কানাডায় থেকে কি কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়া হয়নি? সখ করেও অনেক কিছু করেছি। সেই সখের জায়গায় এখনো বিচরণ করি মনের আনন্দে। ভাললাগে তাই করি। এর অর্থ কি দাড়ায়? সব কাজের অভিজ্ঞতাই মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে শিখায়।

image005

শুধু অভিজ্ঞতা নিলেই হবে না। এর পাশাপাশি নিজেকে প্রতিদিন আপডেট করা লাগে। জ্ঞান বিজ্ঞানে বিশ্ব প্রতিদিন সামনের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আপনাকে অন্তত প্রতিদিনের আপডেট খবরটি জানতে হবে। এই বিশ্বের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে তা জানতে হবে নিজের প্রয়োজনেই। আমরা যে যুদ্ধ দেখছি এর পিছনে মূল কি শক্তি কাজ করছে তা জানতে হবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য। পুঁজিবাদী দেশের মৌলিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যদি আমরা না বুঝতে পারি তা হলে আমরাই তাদের দ্বারা নানা ভাবে চালিত হয়ে তাদের স্বার্থই রক্ষা করে যাবো। যেমন সোফিয়া খুব সুন্দর ভাবে বাংলার মাটিতে জায়গা দখল করে নিয়েছে। সেখানে আমাদের খেটে খাওয়া মানুষগুলো মাটির সাথে একেবারে মিশে যাবে। শুধু এখানেই শেষ নয় আরও অনেক ব্যাপার আছে। আমাদের অজ্ঞতাই আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।

উন্নত দেশগুলো জানে যে তারা কি ভাবে নিজের ঘরটি সুন্দর রাখবে। শুধু জানি না আমরা। নিজের সংস্কৃতিকে ঠিক মত বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই তারা আসলে আজীবন পরাধীনই থেকে যাবে। এই পরাধীনতার চেহারা সেই আগের মত নেই। এটি উপরে মানবিক রূপ নিয়েছে কিন্তু ভিতরে রয়েছে শোষণের হাতিয়ার। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি অনেক জটিল হয়ে গেছে। সেটি ভাল ভাবে বুঝতে হবে দেশের প্রয়োজনেই। তা নাহলে আমরা সারাজীবন অন্যের দ্বারা ব্যবহৃত হতেই থাকবো। এই দাসত্ব হলো আধুনিক দাসত্ব।

image004

আমরা ক্রাফট ম্যানকে খুব ছোট করে দেখি। এই কানাডায় একজন ইঞ্জিনিয়ারকেও ভাল ক্রাফট ম্যানও হওয়া লাগে, একজন শিল্পীকে কর্মী হওয়া লাগে। মেধাবী হলেই যেন শারীরিক কোন পরিশ্রম করা যাবে না। এই তত্ত্বটি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্য সত্য বলেই তারা এত পশ্চাৎপদ ও মননে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ধারণকারী মানব সমাজ। এখানে না আসলে আমার অনেক কিছুই শেখা হতো না।

বাজারে গিয়ে আপনি ফার্নিচার কিনবেন, সেই ফার্নিচার কিন্তু আপনাকেই এসেমবিলিং করতে হবে। সেটি ইন্ডিকেশন পেপার পড়ে পড়ে বুঝতে হবে। এর জন্য কিন্তু কোন কর্মী নেই, আপনাকেই কর্মী হওয়া লাগবে। একটা দেশ, একটা জাতির উপর আস্তে আস্তে এত ময়লা জমেছে কেন? কারণ যে ময়লা তৈরি করে সে যদি তার সেই ময়লাটা সময়মত গার্বেজে না রাখতে জানে তাহলে সেই ময়লা সেখানেই থেকে যাবে। আস্তে আস্তে এই ময়লার স্তূপ হবে। নিজের ময়লা নিজেকেই পরিষ্কার করাতে হবে তবেই না জায়গাটি পরিষ্কার থাকবে। বাংলাদেশের শিক্ষিতজনেরা তো নিজেদের ময়লা নিজেরাই পরিষ্কার করতে জানে না। নিজের রান্না নিজেই তৈরি করতে জানে না। শুধু জানে চেয়ারটি কি ভাবে নিজের দখলে আনতে হবে। আর আজীবন সেটি কি ভাবে দখলে রাখা যাবে। এর ব্যতিক্রম তেমন দেখা যায় না।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s