লিখেছেন- নাদেরা সুলতানা নদী
দর্শন শাস্ত্র নিয়ে পড়েছি, বলেছি বোধহয় অনেকবার, পড়ালেখা করে পাশ দেয়ার সময়টাতে যতোটা মনোযোগ দেয়া দরকার ছিলো সেটা হয়নি বিবিধ কারণে। কিন্তু একটা সময় পর খুব খুব বেশীই টানছে আমায় ‘দর্শন’।
যেকোন বিষয়ে মানুষটার জীবন দর্শন বা সাইকোলজি কি এই ভাবনা আমায় ভাবায় এবং আমি খুব আগ্রহ নিয়ে জানার বা বুঝার চেষ্টা করি আজকাল।
ফেসবুক যোগাযোগ অনেক অনেক অপরিচিত মানুষকে নানানভাবে অনেকটাই কাছের মানুষ হিসেবে নিয়ে আসে। অনেক জুনিয়র ছেলেমেয়ে এই আমাকে খুব ভালোবেসে ‘নদী আপা’ বা ‘নদী দিদি’ ডাকে। আমার নিজের ভাই-বোন বা কাছের অনেক কাজিন থাকার পরও বলতে দ্বিধা নেই অনেককেই আমি রীতিমত কাছের ভাই-বোন বলেই ভালোবাসি।
কারণ একটাই আমার জানতে ইচ্ছে করে আমার থেকে এক যুগ বা অর্ধ যুগ পরের ছেলেমেয়েরা কিভাবে ডিল করছে তাদের জীবনের চাওয়া এবং পারিবারিক বা এর বাইরের সম্পর্কগুলো। অন্তত ফেসবুক যোগাযোগেই যতটা বুঝা যায়, তাদের স্বাভাবিক প্রকাশ থেকেই আমি বুঝে নেই বা নেয়ার চেষ্টা করি।
এই রকম কাছের বেশ কজন ভাই বোন তাদের জীবনের সবচেয়ে আবেগীয় কিছু মুহূর্ত, ভালোবাসার মানুষ এবং সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার গল্প আমায় বলেছে। আমি আমার মত করেই তাদেরকে বলেছি, বলছি এবং পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সেই গল্পগুলো আমি আমার মনের গভীরেই রেখে দিচ্ছি সযতনে।
প্রেমের সম্পর্ক কোন না কোন কারণে ভেঙ্গে গেলে সেই সময়টুকু একটু বেশীই কষ্টের এবং এলোমেলো এক পৃথিবীর বাসিন্দা বানিয়ে দেয়… বেশী না অল্প কয়টা এই বিষয়ক আমার ভাবনা শেয়ার করি আজ, কারো না কারো কাজে লাগতে পারে।
১। খুব খুব মনের মত একটা মানুষের সাথেই হয়তো প্রেম হলো, কিন্তু কোন একদিন হুট করে মেয়েটা বা ছেলেটা তোমাকে ছেড়ে চলে গেলো। মেয়েটার পরিবার হয়তো তোমার কথা জানার পর কোন কারণে কনভিন্স হলোনা, মেয়েটাকে ইমোশনালি মোটিভেট করে ফেললো এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে। স্বাভাবিক ভাবেই তুমি তোমার জায়গা থেকে খুব বোল্ডলি চেষ্টা করবে তার মুখোমুখি হয়ে জানার জন্যে সত্যিটা, হতে পারে চিঠি মাধ্যমে। কোন ভাবেই সেটি না হলে, ‘’নিজেকে ডিল’’ করতে হবে এবার। একমাত্র সময় এবং সময়ই পারে এই সময়টুকু পার করে নুতন একটা সময়ে তোমাকে দাড় করিয়ে দিতে। তাই … অপেক্ষা।
ঠিক তেমনি, মোটামুটি সহজ সুন্দর একটা সম্পর্কের পর একটা ছেলে যদি অন্য কোথাও কমিটেড হয়ে যায় বা বিয়ে করে ফেলে তোমাকে ছেড়ে, তার জন্যেও অনেক অনেক কষ্ট হলেও অবশ্যই তোমার এই চ্যাপ্টার ক্লোজ করে সামনে এগুতেই হবে। সে তোমাকে অনেক ভালোবাসলে এটা কিছুতেই করতে পারতোনা, সো তোমারও উচিত ‘অপেক্ষায়’ ভরসা রাখা সামনের ‘সময়ের’!
২। প্রেম বলে কয়ে হয়না, হয়ে যায়, কথা সত্যি (আমার কাছেও তথ্য আছে) তবে বিষয় হচ্ছে এই প্রেম হয়ে যাওয়ার জন্যে কিছু কী-পয়েন্ট থাকে, ছেলে বা মেয়েদের, এই যেমন একটা ছেলের হয়তো কিচ্ছু না-
একটা মেয়ের লম্বা মাথার কেশ
এই নিয়ে তার আদিখ্যেতার নেই শেষ।
একটা মেয়ে হয়তো, আর কিছু না একটা উঁচালাম্বা ছেলেই স্বপ্ন।
এমন ছেলে মেয়েও আছে, যাদের আগ্রহ শুধু পড়ুয়া একটা মানুষ…
এখন কথা হচ্ছে তুমি যদি গো আজমের বংশধর হও তোমার তো ‘ইরানী গোলাপ’ লাগবেই। তাই কার পছন্দ কেমন তার একটা নুন্যতম যোগসুত্র কিন্তু থাকেই, তাই ভালোলাগা থেকেই যদি ভালোবাসা হয়, তোমার ভালোলাগাটাকে আগে ভালোবাস এবং তাকে একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে যাও… (সেটা যেন আবার মাত্রা ছাড়া না হয়) ।
৩। লেকচার শেষ-
লাস্ট উপদেশ দেই, সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে আমি যে বলছি, সময়ের অপেক্ষা করতে, এই দমবন্ধ করা সময়টকু কিভাবে কাটবে তোমার…
• ব্যস্ত হতে হবে, সেটা পড়া, বা ঘরের কাজ বা চাকরী নিয়ে।
• নিজের একটা একান্ত জগত করতে হবে, যদি তোমার না থাকে, প্রিয় লেখক, প্রিয় গান, প্রিয় প্রিয়গুলোতে একটু আস্থা রাখতে হবে, হবেই ।
• কান্না আসলে কাঁদতে হবে মন খুলে, সেটা হতে পারে শাওয়ার নিতে গিয়ে একা বা রিক্সা করে লম্বা কোন ট্যুরে পাশে একটা বন্ধু পেলে ভালো, না হলে একলা চলোরে।
• কাছের কোন না কোন ভাই বোন বন্ধুকে শেয়ার করতে পার কষ্টটা, যাকে তুমি পছন্দ কর, বিশ্বাস কর।
• একটা জিনিস খুব করে মাথায় নিয়ে নিও, এটা তোমার জীবনের খুব গুরুত্বপুর্ণ একটা বিষয় তবে একমাত্র নয়। আরো অনেক প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় বিষয় তোমাকে ঘিরে তোমায় নিয়ে সামনে ঘটবে। সে তোমার কাংখিত কেউ ছিল হয়তো, তুমি তার নও, হলে তো সব বাঁধা পার হয়ে তোমাতেই মজে থাকতো।
• খুব ভালো হয়, এমন ঘটনার পর যদি নিজের ক্যারিয়ারের দিকে খুব করে তাকাতে পারো। শুধু ক্যারিয়ার তোমাকে নুতন পৃথিবী দেখাবে একদিন।
এই লেখা যদি এতোটুকু কারো কাজে লাগে, আমাকে ভালোবাসা জানাতে ভুলোনা, সেটা মনে মনে হলেও চলবে, আমি ঠিক ঠিক বুঝে নেবো।
কষ্টের কথা যারা জানিয়েছো আমায় বা যাদেরটা জানিনা, তাদের জন্যে শুভ কামনা কাটিয়ে উঠ এই সময়।
যে যারে চাও তারেই যেন জীবনে পাও, এই ব্লেসিংসটা খুব খুব দরকার জীবনে সামনে চলার জন্যে!
নাদেরা সুলতানা নদী
৩ ডিসেম্বর ২০১৭
মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া