লিখেছেন- রওশনারা বেগম
প্রবাসে প্রধানত ওয়েস্টার্ন দেশগুলোতে যারা দীর্ঘ দিন বসবাস করছে তাদের সাথে বাংলাদেশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে একটা বিরাট ফারাক তৈরি হয়েছে। নীতি নৈতিকতার যে ফারাক তা তো বলে শেষ করা যাবে না। জীবন যাত্রার ক্ষেত্রেও কোনটা ভদ্র আবার কোনটা অভদ্র তাও পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। কিছু একজাম্পেল দেই। আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম তখন চারপাশে কোন ল্যান্ড ফোন ছিল না। আমাদের বাসায় একমাত্র বাবার অফিস থেকে পাওয়া ফোনটির প্রতি চারপাশের মানুষের ব্যাপক কৌতূহল ছিল। ফোনে কী ভাবে কথা বলতে হয় আমাদের ছোট বেলায় শিখানো হয়।
সম্ভবত সেটি ৮৪ সালের দিকের কথা। আমি তখন খুব ছোট। ঐ সময় আমাদের বাসায় লোকে প্রয়োজনে ফোন করতে আসতো। একদিন একটা লোকের ফোনে কথাবার্তা শুনে আমার বাবা খুব কষ্ট পেয়ে বলেছিলেন এই ফোন যাকে তাকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। এখন তো সেল ফোন সবাই হাতে চলে গেছে অথচ সেই সেল ফোন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কী কাজে ব্যবহার করছে? একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় সেই সেল ফোন ব্যবহার হচ্ছে নানা অপরাধ মূলক কাজে। প্রযুক্তি হাতের মধ্যে চলেগেছে তবে শিক্ষা এখনো যায়নি তাই সেই সেই প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে অপব্যবহার দিয়ে। ভাল কাজে নয়। যেমন কোন সত্য উতঘাটিত হলেই চলে আক্রমণ। এই আক্রমণ যা তা আক্রমণ নয়। গায়ের জোরে ভক্তদের লাগিয়ে তাকে শেষ করে দিতে হবে চিরতরে। যেমন সরকারী পার্টি এখন সব ব্যবসা বাণিজ্যের দায়িত্ব নিয়েছে। ভিন্ন মতের সেখানে জায়গা নেই। কারা গুম হচ্ছে?
কে দোষী?
এখানে মানে কানাডায় জন্ম নেওয়া ছেলে মেয়েরা এত সহজ সরল যা কল্পনাই করা যায় না। এখান স্কুলে বুলিং হলেই খবর আছে। ছেলে মেয়েরা কোন প্রকার বুলি সহ্য করে না। এর জন্য শাস্তি আছে মার ছাড়া। যেমন ডিটেনশন, কমিউনিটি ওয়াক, কাউন্সিলিং। গত সপ্তাহে একটা ছেলে স্কুলে বুলিং সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ভদ্র সমাজ বলে কথা। আর বাংলাদেশের মানুষ অনলাইনে কি করছে? তারা নাকি অনেক শিক্ষিত। ব্যবহার দিতে টাকা খরচ হয় না, অথচ সেই ব্যবহারটি তারা শিখি নেই। ঘরকে সুন্দর রাখতে গেলে কিছু গুণ লাগে। সেই গুনের চর্চা না করে যদি অন্য চর্চা হয় তাহলে সেখানে কি তৈরি হয়? কিছু আবর্জনা আর ময়লা। এখন অনেকেই দেখি ফোন ধরে না। এর কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় অন্য সাইকোলজি। দায়িত্ব বোধের ঘাটতি, কর্তব্য অবহেলা এটি এখন সেখানকার ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটি তো কোন জরুরী ফোন হতে পারে। তাহলে কেন এমন? আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই। যা ইচ্ছা তাই করার অর্থ স্বাধীনতা? তোমার ইচ্ছা হয়েছে যাকে তাকে গালিগালাজ করবা, ভারবাল এবিউজ করবা। আর বিনাবাক্যে তা মেনে নেবো? সভ্য সমাজ তা কখনো মেনে নেয় না। অসভ্য বর্বর সমাজেই এই গুলো চলে।
বরং দ্বিমত করো, দ্বিধান্বিত হও, প্রশ্ন কও, এবং দ্বিতীয় বিদ্যায় আস্থা রাখো
একবার বাংলাদেশে গিয়ে আমার মেয়ে শাড়ি পড়েছিল। আমার এক পরিচিত তাকে বার বার যাচাই বাছাই করার জন্য একই প্রশ্ন বার বার করে। এই মেয়ে তোমার জন্ম কোথায়? আমার মতই তারও প্রিয় শাড়ি। এই শাড়ি পড়ার জন্য তার জন্ম স্থান বের করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া, বেড়ে উঠা মেয়েরা পোশাক দিয়ে ওয়েস্টার্ন সাজার আপ্রাণ চেষ্টায় যখন মেতে উঠে তখন কানাডায় জন্ম নেওয়া এক মেয়ে যখন বাংলাদেশে যেয়ে শাড়ি পড়ে তখন তাকে যে চোখে দেখা হয় তা একেবারেই অন্য রকম। আমি অবশেষে তাকে বলি আমার মেয়ে মিথ্যা কথা বলতে জানে না। তুমি কেন তাকে বার বার বদার করছো? পোশাকটি পরিবর্তন করলেই যেন আমার মূল্য বোধের পরিবর্তন হয়ে গেল। একটা দেশের সমাজ রাজনীতি, ধর্মের থেকে যে নীতি নৈতিকতা দাড়িয়ে যায় তার থেকে মুক্ত হয়ে ওয়েস্টার্ন পোশাকটি নিলেই মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করা যায় না। এটি একটি সমাজ ব্যবস্থার ফসল। তাই বাংলাদেশের মানুষের নীতি নৈতিকতার মানদণ্ড বহির্বিশ্বের দ্বারা বিচার করলে কোথায় দাড়ায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।