উদ্যোগীর মন ও স্বাধীনতা


final

লিখেছেন- রওশনারা বেগম

 

অধীনস্থতা মানুষের অনেক কিছু কেড়ে নেয়। অন্যের অধীনে দীর্ঘ দিন চাকুরীরত মানুষের মানসিকতা একেবারেই ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। সে যত বড়ই উচ্চ পদস্থ আমলা হোক না কেন তার নিজের ভিতরে এক ধরনের দাসত্ব তৈরি হবেই। তবে ম্যানেজমেন্টের ভিন্নতায় এর ধরণও ভিন্ন রকমের হবে।

একজন উদ্যোক্তা যে তার নিজের কর্মস্থান নিজেই তৈরি করতে পারে সে অন্যের তৈরি ম্যানেজমেন্টের বাইরে এসে একটা নিজস্ব পছন্দ মত পদ্ধতি গড়ে তোলে। তাই সে দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে একটা স্বাধীনচেতা মানুষ হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। অন্যের অধীনস্থ থেকে তা করা প্রায় অসম্ভব হয়। যে উপরের হুকুম পালন করতে পারে সে ক্রমান্বয়ে এমন এক হুকুম তৈরি করবে যার দ্বারা সে তার অধীনস্থ কর্মচারীদের পালনে বাধ্য করতে পারবে। যার মাধ্যমে এক ভিন্ন ধরনের পরাধীনতাই তৈরি হয়। তবে এখানে নির্ভর করছে ঐ হুকুম তৈরি কি উদ্দেশ্যে হয়েছে।

image002

আমাদের গার্মেন্টস শিল্প

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সরকারী কর্মচারীদের একটা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। এই প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমার এক আত্মীয় সরকারী অনেক বড় আমলা। কোন এক অফিসিয়াল কাজে উনার কাছে যেতে হয়েছিল। গিয়ে জানতে পারলাম যে দুপুরের লান্সের পরে উনি নামাজে বসেছেন। আত্মীয়ের পরিচয় দেওয়াতে উনার কর্মচারীরা আমাদের বেশ আপ্যায়ন করে ওয়েটিং রুমে বসালেন যা উনার অফিস রুমের মধ্যেই ছিল। পাশের রুম থেকে নামাজ পড়ে উনি রুমে এসে নিজের চেয়ারে বসলেন এবং আমাদের দেখলেন। কোন উচ্ছ্বাস আগ্রহ কিছুই দেখতে পেলাম না। অবশেষে উনার কর্মচারী এসে উনাকে জানালেন যে আমারা কে। তারপর উনি আমাদেরকে কাছে ডাকলেন। পরিচয় দিলাম, কি কাজে এসেছি তাও জানালাম। উনি সব শুনলেন। যে কাজের জন্য আমাকে কমপক্ষে ৭ দিন অপেক্ষা করা লাগতো সেই কাজ উনি ফোন করে মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে করে দিলেন। তারপর নাস্তা পানির ব্যবস্থা করলেন। এর পর আস্তে আস্তে উনি কানাডা আমেরিকার সম্পর্কেও জানতে চাইলেন। কত দিনের জন্য এসেছি এইসব। তবে প্রশ্ন করার মধ্যে খুব সন্দিগ্ধ আচরণ লক্ষ্য করায় আমি চুপ থেকেছি। যা যা উত্তর দেবার দরকার তা শাখাই দিয়েছে। তার এই আমলাতান্ত্রিক আচরণে আমি আসলে একটু বিরক্ত হয়েছিলাম। যত সময় উনার সামনে ছিলাম ততো সময় খুব অস্বস্তির মধ্যেই ছিলাম।

বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক আচরণ সম্পর্কে আমার আগের কোন ধারনা নেই। আর এই কানাডায় ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি একেবারেই আলাদা। এখানে একজন মানুষ সে যতো বড়ই আমলা হোক না কেন চালচলন আচার ব্যবহারে কোন ভিন্নতা থাকে না। সব কিছু সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে চলে। দীর্ঘ দিন চাকুরী করতে গিয়ে উনি আমলাতান্ত্রিক আচরণটি বেশ আয়ত্তে এনেছেন। এখানে উনার নিজস্ব স্বকীয়তা কী উনি রাখতে পেরেছেন? চাকুরী করে এটি রাখা অনেক কঠিন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরও কঠিন। এজন্যই আমি উদ্যোক্তা হবার কথা বলছি। সে যতো ছোটই উদ্যোক্তা হোক না কেন এর মধ্যে এক বড় মহত্ব রয়েছে তাহলো নিজস্ব চিন্তা ভাবনার বিকাশ। যার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে এক মাত্র সেই একজন ভাল সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন। উদ্যোক্তা আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে আত্মসম্মান ফিরে পায় যা তাকে দুঃসাহসী করে এবং তার কাজের জন্য ঝুঁকি নিতে সন্দিহান করে না।

int

উচ্ছ্বসিত মনের বিপ্লব

বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তার বিকাশ হয়েছে। যদিও নানা বাধা বিপত্তির মধ্যে এগোতে হচ্ছে। আমার নিজেরও এক সময় খুব ইচ্ছা হয়েছিল উদ্যোক্তা হবার। তিন বান্ধবী মিলে কাজটি শুরু করেছিলাম। বেশ দূর এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক এই সময় আমাকে দেশ ছাড়তে হলো। যাই হোক এই কানাডার মাটিতে এসে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখানেও বেশী দিন চাকুরী করতে পারি নাই। ভিতরের রক্ষণশীল বৈষম্য আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি। করেছি নিজের সাথে নিজেই বিদ্রোহ। অর্থাৎ চাকুরী ছাড়তে হয়েছে বহু জায়গায়। মোটা চামড়ার লোক আমি নয় যে চোখ মুখ বুজে সব সহ্য করে যাব। এদেশে উদ্যোক্তা হওয়া অনেক কঠিন একটি কাজ। নিয়ম কানুন দিয়ে সব কিছু বেশ কঠিন ও জটিল করে রাখা হয়েছে যা বাংলাদেশে একেবারেই অনুপস্থিত। তাই আমার মনে হয় বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়া বেশ সোজা কিন্তু ঝুঁকিও রয়েছে অনেক। সেই ঝুঁকি একেবারেই এখান থেকে ভিন্ন। নিরাপত্তার ঝুঁকি সব চেয়ে বড় ঝুঁকি। যাই হোক এর পরেও বাংলাদেশের অনেক নারী ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে ঝুকেছে যা আমাকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। একজন উদ্যোক্তাই পারে সমাজকে অনেক উন্নত করতে যার প্রমাণ আর পি শাহা। উনি সমাজকে যা দিতে পেরেছেন তা একজন চাকুরীজীবীর পক্ষে কোন দিনও সম্ভব না।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s