দুবলার স্বর্গ


khali

লিখেছেন- শেখ খলিল শাখা নির্ভানা

 

বনেদি ধাঙড় দুবলা ঠারা নিশ্চিন্তপূর গেলেই একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে। যে কাঙ্খে তার এতকাল মলের ড্রাম স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলো, সেই জায়গা এখন দখল করে বসে আছে দুবলার তিন বছুরে ডাঙ্গর পোলা মাধাই। কতই বা ভার, মলের ডোলের থেকে বেশী হবে না! তারপরেও কষ্ট হচ্ছে, ঘাম ঝরছে অকাতর। এরই মধ্যে দেড় ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে সে। শুনেছে ওখানে শান্তি আছে, সুখ আছে- মানে, শান্তি ঠারা, আর আর সুখ ঠারার পুরা গুষ্টি-বনেদ সব আছে। তাহলে তো কোন চিন্তাই নেই তার। কোলে বসে বসে ছেলে বিরক্ত। মায় এক ঢোক জল খায়। মায়ের শরীরে ধাক্কা দিয়ে ছেলে জিজ্ঞেস করে- মা, নিচ্চিন্তিপুর আর কদ্দুর?

image004

জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে ছেলেকে নিয়ে দলিত- একদিন তার সাতমহলা বাড়ি হবে

-ঐ যে বাবা রাজার সাতমহলা বাড়ী দেখতিছো, ঐডারে বায় থুয়ে আর দুইপা সামনে এগোলিই নিচ্চিন্তপুর।
দুবলার সম্বল বলতে এই একখানা ডাঙ্গর ছেলে। তারে নিয়ে সে খোয়াব দেখে জেগে জেগে। ছেলেকে সে মেথর বানাবে না- ধর্ম সাক্ষী। ছেলেকে নিয়ে এবার সে যাবেই। কিছু না থাকলেও সুখ আর শান্তির জন্যে তার যাওয়া লাগবে নিশ্চিন্তপুর। অনেকের মতন তারও।

একসময় উপরওলা সদয় হয়। দুবলা পৌছে যায় ছেলে নিয়ে সাধের চিশ্চিন্তপুর। এখানে বহুঘর হিঁদুর বাস- মিলেমিশে থাকে। অপেক্ষা করে দুবলা। সময়ের পিঠে সময় পার হয়ে গেলেও শান্তি বা সুখ কেউ আসে না মায়-পুতেরে দেখতে। সুখ, শান্তিরাও কি চলে গেলো ওপারে?

তবে হঠাৎ হঠাৎ কেউ না কেউ আসে। মানুষ আসে, তারই মতন হাত-পা-রক্তের মানুষ। কুলীন নয়, তবে ধাঙড়ই হবে হয়তো- আন্দাজ করে দুবলা দলিত। কে একজন অবাক হয়ে চমকে দিয়ে বলে যায়- এই মালায়নটা আবার আলো কইত্তে! অনেকগুলো ঘটি-কলস পাশাপাশি রাখলে গুতোগাতা লাগে। মুচি মেথরেও তো একজায়গায় বাস করে ঠুনোঠুনি করে, কাইজা ফ্যাসাদ করে, কৈ একবারও তো মনের ভুলে কেউ কাউরে এমন কথা কয় না! অবাক হওয়া পথচারীর কথা শুনে আরও বেশী অবাক হয় দুবলা ধাঙড়। মনে মনে ভাবে- মেথরের আরো নীচেও তাইলে কেউ আছে, হায়রে মানুষ।

image003

মজা করে ওকে জিজ্ঞেস করলে বলে- আমার ছেইলে-মেইয়ের প্যাটের ময়লা গো, বাবু

মালায়ুন শব্দটা দুবলার বড়ই চেনা। তারপরেও তার মনের ভিতরে চিন্তা বাড়ে। দুঃশ্চিন্তাও বাড়ে। চমকায় সে। দুঃচিন্তা নিয়ে নিশ্চিন্তপুরে সে কেমন করে একটা সুখের ঘুম দিবে? সারা জীবন ময়লা ঘেটেছে দুবলা। মলের আর দোষ কি? তার না আছে জাত, না আছে ধম্ম। পোলাডারে তার একটা বাঁচার ঠিকানায় পৌছে দিয়ে তার ছুটি। হাটা শুরু করে দেয় সে। মনটা খারাপ হয় তার, খুব খারাপ, কিন্তু কান্না আসে না। তার বদলে নিজের উপরে ভীষণ রাগ হয় দলিতের। উপরের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুলের ইশারায় অভিশাপ দেয় উপরওলাকে- ভগবান, তুই ক্যান আমারে ধাঙড় বানালি, ক্যান ঐ রাজার সাত মহলা বাড়ির বান্দী করলি না। পা চালায় দুবলা। নিরুদ্দেশে তার আর ভয় কি? তার ভয় কেবল আগুনে। ভয় পাওয়া অন্তরাত্মা দিয়ে গুণগুনিয়ে একখানা গানও ধরে গলায়- আগুইনে যার ঘর পুইড়েছে, সিন্দুর রাঙ্গা মেঘ দেইখে তার ভয়……। বেশিদূর এগোয় না গান। অবশেষে মানুষের মল বওয়া কাঙ্খে ছেলে বসিয়ে নিয়ে আবার নিরুদ্দেশের পথে হারিয়ে যায় দুবলা ঠারা। কোলে বসে ছেলে মাধাই আবার ধাক্কায় মায়েরে- এই মা, সুখ কাহা, শান্তি কাহার বাড়ি যাবি না? মা ফিসফিসিয়ে উত্তর করে- ওরা মইরে গেছে, বাপ।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s