লিখেছেন- রওশনারা বেগম
কিছু কিছু সম্পর্ক আছে যাকে রক্তের সম্পর্ক নাম দিয়ে অনেক ঘটনা প্রবহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এটির উপর ভিত্তি করে এক গভীর মায়া মমতারও সৃষ্টি হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই রক্তের সম্পর্ক টেকেও না। এতে মনে হতে পারে জীবন থেকে অনেক বড় কিছু হারিয়ে গেছে। আসলে এই জগত সংসারে হারানোর কিছুই নেই। কোন কিছুই আজীবন ধরে রাখা যায় না। সবই এক সময় ছেড়ে দিতে হয় বড় কোন প্রাপ্তির প্রয়োজনে। রক্তের সম্পর্কের মধ্যেই দেনা পাওনার চাহিদা অনেক বেড়ে যেতে পারে যা অনেকের পক্ষে দূরে সরানো অনেক কঠিন হয়ে যায়। সান্ত্বনা আসে নিজের ভাই বোন করেছে মেনে নাও। আর মেনে নেওয়াই যেন সুখী হওয়ার শর্ত। আসলে কি তাই? পারিবারিক বন্ধন সবার জন্য সুখকর নাও হতে পারে। এমন কি পারিবারিক কূট জালে নিজের মা বাবার হাতেই মেয়েটি বঞ্চিত হয়ে থাকে সম্পত্তির থেকে কোন এক সময়। যা আমাদের সমাজে অহরহ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সম্পর্কের দোহাই দিয়ে মুখ বুজে সহ্য করে যাই এবং চেষ্টা করে যাই যে কোন ভাবেই হোক যেন এই সম্পর্ক ধরে রাখতেই হবে। আসলে এটা আরেক বোকামি।
দিনে দিনে শুধু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ
এই পৃথিবীটা অনেক বড়। এখানে অনেক কিছু করার আছে যা এই ক্ষুদ্র একটা সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ নয়। অনেক সময় দুঃখে কাতর হয়ে সময় নষ্ট হয়ে যায়। এই সুন্দর পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। সম্পর্কের হাত ধরে যা করা হয় তা এক সময় দাবী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। অর্থাৎ তুমি আমার জন্য এটি করতে বাধ্য। এটি এক ধরনের শৃঙ্খলিত জীবনের মধ্যে থেকে যাওয়া বটে। এর থেকে বের হতে পারলেই জীবনের নতুন কোন দরজা খুলে যায়। আর এই দরজার প্রসার এত ব্যাপক যে এর মধ্যে এই ক্ষুদ্র জীবনের উপলব্ধিতে ঠাই পাওয়া খুব কঠিন। কষ্ট ও সাধনা করে পৃথিবীর অপর প্রান্তে দাড়িয়ে থাকে আরেকটি প্রসারিত দরজা, যদি প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন হয়ে যায় তা হলে সেই ব্যক্তির কাছে ক্ষুদ্র কোন সম্পর্কীয় বন্ধন টিকে থাকতে পারে না। তখন অনেক বড় বড় সম্পর্ক মনের বিশালতার থেকে তৈরি হতে থাকে।
যাদের এই সমাজ সংসারে বাবা মা ভাই বোন কেহ নেই, নিজেকে তাদের একজন ভাবতে পারা কি গৌরবের কিছু নয়? এই বোধটি অনেক বড় পাওয়া বোধ। যে এই বোধটি পেয়েছে তার জন্য কেহ প্রয়োজন হয় না বরং তার প্রয়োজন অনেক বেশী বেড়ে যায় এই পৃথিবীর জন্য, বঞ্চিত মানুষের জন্য, দুঃখী মানুষের জন্য। এখনে কোন রক্তের সম্পর্ক কাজ করে না। আসলে না পাওয়া বোধের কারণেই অনেক কাজ থেমে থাকে। সেখানে বিশালত্বের ছোঁয়া দেখা যায় না। যা থাকে তা হলো ক্ষুদ্র স্বার্থ বোধের টানা পোড়ন। অন্যের জন্য কিছু ভাবনা আর জমা থাকে না, যা থাকে তা হলো একান্ত আমার। যার মধ্যে অন্যের কোন সত্ত্বা থাকে না। এটা দিয়ে আর যাই হোক সার্বজনীন কোন কাজের অনুপ্রেরণা মেলে না। আর এটাই হলো সংকীর্ণ জীবন বোধ। যেখানে নিজের চাহিদা শেষ হয়েছে সেখানে নতুন কোন স্বপ্ন তৈরি হতে পারে যা পৃথিবীর কোন এক কোনায় দুঃখকে দূর করে দিতে পারে। তাই তো ফেসবুকের পাতায় আমি খুঁজে পাই আমার নিজের ভাবনায় মগ্ন কোন এক নারী যে নিজে কাজ করে যাচ্ছে ৩০-৪০ টি বাচ্চার মা হয়ে। কোন বাচ্চার জন্ম না দিয়েই যে নারী অনেক বাচ্চার মা হতে পারে সেই নারী বিজয়ী নারী। পতিতার ঘরে জন্ম নেওয়ার অপরাধে তাদেরকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল, কোন এক বিজয়ী মা এসে তাদেরকে কোলে তুলে নিয়েছে। এই মাতৃত্ব আর আমাদের জন্ম দেওয়া সন্তানদের ধরে রাখা মাতৃত্ব এক নয়।
ওরে আকাশ তোদের ডাক পেড়েছে, আয়রে টুটে সব বাঁধন
তাই সম্পর্কের হাত ধরে চলার পথে কোন একটি দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায় আরেক দরজা খুলে যাবে। যাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল কোন এক ঘর থেকে সে আরেক ঘরে স্বাদরে আমন্ত্রণ পাবে নিজ যোগ্যতায়। তাই দৃষ্টির সীমাবদ্ধতায় আটকিয়ে থাকলে জীবনের বড় অপচয় হয়। সেই সীমানা ভাঙ্গা লাগে বৃহৎ কোন প্রয়োজনে। অনেক সময় কঠিন কোন আঘাত সেই সীমানা ভাঙ্গে ফেলে। আর সীমানা ভেঙ্গে গেলেই কোন সুতার টান থাকে না। যে টানটি থাকে তা হলো বৃহৎ কোন বোধের টান। আর সেই বৃহৎ টানেই সেই হয় বিজয়ী। তখনি সে পারে নতুন কোন সম্পর্ক তৈরি করতে। এটাই হলো জীবনের নতুন মাত্রা।