লিখেছেন- মঞ্জুরুল হক
বাংলাদেশে আসলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে! রামু, নাসিরনগর, গঙ্গাচড়ায় যে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর হয়েছে তা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলতে দুটি সাম্প্রদায়ের সম্মুখযুদ্ধ বোঝায়। এখানে যা হচ্ছে তা হল সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যালঘু ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন করছে, আর হিন্দু সম্প্রদায় সরকারের, সমাজের প্রটেকশন না পেয়ে ঈশ্বরের কাছে নালিশ জানিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে ভিন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। অতঃপর সেই ভিটে-মাটি দখল করছে ক্ষমতাশালী মুসলিম সম্প্রদায় যাদের প্রতি রয়েছে সরকারের এবং সমাজের সমর্থন! এই ধারা চলে আসছে স্বাধীনতার পর থেকেই। কোনো সরকারই এই ‘পাপ’ থেকে মুক্ত নয়।
কে মার খায়, অত্যাচারী, নাকি অত্যাচারিত? আরেকটু এগিয়ে দেখুন তো!
সরকার তার কায়েমি স্বার্থ হাসিল করতে, বিশেষ করে ভোটের রাজনীতিতে উইনিং উইনিং পজিশনে থাকতে চাওয়ার কারণে এই ধরণের ‘এথেনজিক ক্লিনিং’কে উৎসাহীত করে। টেকনিক্যালি আইনের ফাঁক গলে কাজটা করে। সরকারের লোকজন বিলক্ষণ জানে ফেসবুক-এ পোস্ট দিয়ে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার ব্যাপারটায় অনেকগুলো টেকনিক্যাল মিসহ্যাপস থাকে। অনেক ফেক একাউন্ট এই সব ক্রিমিনাল অফেন্সগুলো করে বিভিন্ন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবার জন্য। তার পরও সরকারের লোকজন ৫৭ ধারা দিয়ে অত্যাচারীদের না ধরে বরং নির্মূল করতে চায় অত্যাচারিতকে! এবং এই কাজে তো কেবল সরকারের ‘লোক’ নয়, খোদ সরকারের নীতিনির্ধারক এবং পরিচালনা পর্যায়ের শীর্ষ লোকজন রয়েছে! সুতরাং এগুলোকে কোনো ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ মনে করার কারণ নেই।
বিসমিল্লা বলে সব কাজ জায়েজ করা কি ঠিক?
সরকারের এই কৌশলটি সরকারের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য বিপজ্জনক এবং অপরিনামদর্শী। কিন্তু তার চেয়েও মারাত্মক হচ্ছে এধরণের ঘৃণিত ন্যাক্কারজনক কাজগুলো সমাজের ব্যাপক শিক্ষিত শ্রেণির চোখের সামনে ঘটছে এবং তারা নির্লিপ্ত থেকে কার্যত এই ম্যাসাকারকে সমর্থন জানাচ্ছে। একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত জাতি মাত্র ছেচল্লিশ বছরেই তার যুদ্ধের অন্তর্নিহীত আদর্শ ভুলে গিয়ে সুযোগসন্ধানী কাঠের পুতুল হয়ে যাবে? কেন এমন হল সে প্রশ্নের অনেক ব্যাখ্যা আছে। তবে বাইরে থেকে যত কিছুই বলা হোক, সমাজের অভ্যন্তরে এই ধরণের নির্জিব নির্লিপ্ত অমানুষ হওয়ার ইপ্সা না থাকলে এত দ্রুত এভাবে সমাজটা নর্দমা হয়ে যেত না।
সাম্প্রদায়ীক ঝগড়ায় দুইপক্ষ থাকে। হিন্দু-পীড়ন কি তাই?
এরকম একটি নৈব্যক্তি নির্বিষ নিবীর্য নির্লিপ্ত প্যারাসাইট ইতর সমাজ তৈরি এবং লালনের জন্য শাসকশ্রেণি আর শাসকশ্রেণির সকল কড়ে-বর্গা, খুঁটি-খাম্বাকে অভিনন্দন!
আমাদের সিভিল সোসাইটি বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। যদি থাকতো, তবে দেশ এইভাবে খাদে পড়ে হাবুডুবু খেতো না।
LikeLike