প্রিভেন্টিভ মেডিসিন! সুস্থ্যতার উপায়।


aami

লিখেছেন- শেখ খলিল শাখা নির্ভানা

 

মানুষ সুস্থ্য থাকে স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্বাস্থ্যকর চিন্তায়। প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের মূল উপজিব্য তাই। জীবন যাপন পদ্ধতিও একটা মেডিসিন। তাই লাইফ-স্টাইল প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে খাবার সম্পর্কে আরও একটা কথা প্রচলিত আছে, সেখানে খাওয়ার সাথে দাওয়া শব্দটাও চলে আসে। আর দাওয়া মানে ওষুধ। তাই জীবন যাপন প্রণালীকে সুস্থ্যতা রক্ষার অণুসঙ্গ থেকে বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। রোগ হওয়ার আগে, যাতে রোগটা পরবর্তীতে না আসে সেটাই প্রিভেনশন বা প্রতিরোধ। একথা কেনা জানে- উপশমের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন খুব একটা বিস্তারিত বিষয়। অত বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে প্রচলিত কিছু ওষুধ, যা খুব সহজে প্রত্যহিক খাবারের সাথে যোগ করে নেয়া যায়, এমন কিছু জিনিসের বিষয়ে বলতে চাই, যারা প্রচলিত খাবারের ভিতরেও পড়ে না, আবার যাদের সরাসরি ওষুধও বলা যায় না।

পামকিন সিড বা কুমড়ার বীচি। শুকালে এটির ভিতরের শাসটা হালকা সবুজ রঙ ধারণ করে। উপরের শক্ত খোসাটা ফেলে দিলে ভিতরে শাসটা খাওয়া যায়। খোসা ফেলার আগে একে হালকা তাপে ওভেনে ভেজে নিতে হয়। বাজারে পাওয়া যায় আবার নিজেরা তৈরি করেও নেয়া যায়। কি আছে এই পামকিন সিডে, সেটা এবার একটু খতিয়ে

pumkin

দেখা যাক। এতে আছে আমিষ, ফাইবার, নায়াসিন, লোহা, জিঙ্ক, ম্যঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, রিবোফ্লোভিন, ফলেট, প্যাণ্টোথেনিক এসিড, সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং আরো অনেক কিছু। প্রচুর পরিমানে এণ্টিঅক্সিডেণ্ট থাকে এতে, যা দেহের যে কোন ধরণের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। পাকস্থলি, স্তন, ফুসফুস ও কোলন ক্যানসারের প্রিভেনটিভ হিসাবে এটা কাজ করে। পাম্পকিন সিড প্রস্টেট ও মূত্রথলির স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে। এতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে, এই বীচি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগ প্রতিরোধ, ওস্থির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ, শুক্রের স্বাস্থ্য রক্ষা, ও উত্তম নিদ্রা নিশ্চিৎ করে।

এবার ধরা যাক সানফ্লাওয়ার সিড বা সূর্য্যমুখী বীচির বিষয়ে। এটার রঙ অনেকটা খড়রঙের বা স্ট্র-কালার হয়ে থাকে। এর উপরের খসখসে আবারণটা সরালে ভেতরের বীজটা বেরিয়ে আসে, যা খুব বেশী শক্ত নয় এবং বীজের বহিরাবরণটা বেশ তেলতেলে। নরমাল উষ্ণতার চেয়ে সামান্য একটু বেশী তাপমাত্রায় রাখলে তেল বেরিয়ে আসে। এটাও একটু ওভেনের তাপে ভেজে নিলে খেতে ভাল লাগবে।

sunfl

বহুবিধ ওষোধি গুণাবলী আছে এই সূর্য্যমুখী বীজে, আবার এটা খুব সহজেই আমাদের খাদ্য তালিকাতেও সংযোজিত হয়ে গেছে। কী আছে এতে? সূর্য্যমুখী বীজ ভিটামিব ই, ভিটামিন বি-১ ও কপারের এক বড় প্রাকৃতিক উৎস। এসব ছাড়াও এর ভিতরে আছে ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ফলেট ও নায়াসিন। এর ভিতরে ফাইটোস্টেরল আছে তা আপনার কোলেস্টেরল লেভেলকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে। মানব দেহে ৩৩০ রকমের বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, সেখানে প্রয়োজনীয় ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করতে পারে এই সানফ্লাওয়ার সীড। সুস্থ্য মুড ধরে রাখতে সূর্য্যমুখী বীজের জুড়ি নেই। এর ভিতরে যে সেলেনিয়াম থাকে তা থাইরয়েডের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে দরকারী।

এখানে তিল বা সিসেমি সিডের কথা না বলে কোন উপায় নেই। তিল দেখতে স্ট্র বা খড়ের রঙের। এর উপরে একটা আবারন থাকে, যাতে থাকে অক্সালেট। এই উপাদানটা শরীরের জন্য অপকারী। কিডনিতে বা গলব্লাডারে পাথর তৈরি করতে পারে এই অক্সালেট। তাই তিলের উপর থেকে এই খোসা ছাড়িয়ে খেলে সেই ভয় থাকে না।

sesame

প্রবাদ আছে তিলে তৈল আছে। আর কী আছে তাতে? কপারের কথা আসলেই তিলের কথা মনে হবে। শুধু কপার নয় এতে আছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগ্নেসিয়াম, লোহা, ফসফরাস, ভিটামিন বি-১, জিঙ্ক, মলিবডেনাম, সেলেনিয়াম ও খাদ্য-আঁশ বা ডায়েটারী ফাইবার। তিল ফাইটোস্টেরলের বড় উৎস, যা এল-ডি-এল কোলেস্টেরলকে কমাতে পারে, এইচ-ডি-এলকে বাড়াতে পারে। এই বীজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা, ক্যান্সার প্রতিরোধ, মেদ নাশ ও পুষ্টি শোসনের ক্ষমতা উন্নয়ন করে। আর কী চাই? তিলের তেল রক্ত পরিশুদ্ধ করে একথা সাধারণের মুখে মুখে শুনা যায় আজও।

এবার উপরের তিন প্রকার বীজের সাথে খাবার উপযোগী চার ধরণের বাদামের কথা বলবো। এরা হচ্ছে- চীনাবাদাম বা পিইনাট, ক্যাজিউ বা কাজুবাদাম, এলমণ্ড ও ওয়ালনাট। এই সব বাদামের গুণাগুণের কথা সবাই জানে, সবাই এর দ্বারা উপকৃত হয়।

peanut

চীনাবাদাম যেমন জনপ্রিয় তেমনি স্বাস্থ্যকর। এই বাদাম উদ্ভিজ প্রটিনের বড় উৎস। এছাড়া এতে আছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, খনিজ ও উদ্ভিজ যৌগ। যারা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান বা হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে চান তারা একবার স্মরণ করবেন চীনাবাদামকে। গলস্টোন বা পিত্তপাথরী প্রতিরোধেও পিইনাট কাজ করে।

কাজু বাদামের গুণের কথা বলে শেষ করা যায় না। এদের দেখতে বাঁকা কিডনির মতন, স্ট্র কালারের। এই বাদামে সবচেয়ে কম ফাইবার থাকে। তবে প্রচুর পরিমানে থাকে ভিটামিন, খনিজ ও এণ্টিঅক্সিডেণ্ট, যা

cashew

নিরোগ স্বাস্থ্য রক্ষার পূর্বশর্ত। এর মধ্য আছে ভিটামিন ই, কে, বি-৬, খনিজ, কপার, ফসফরাস, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা এবং সেলেনিয়াম। যেসব জিনিস একটা মানুষকে সুস্থ্য রাখার জন্যে দরকার তার সব আছে এর মধ্যে। তবে দামটা একটু বেশী। সব ভাল জিনিসের দামটা একটু বেশীই হয়ে থাকে।

ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকলে তাকে বলে এলমণ্ড লুক। এই বাদামের আকৃতি তাই চোখের মতন। এর আছে পোড়া ইটের রঙের আভা। এর গায়ে আছে লম্বালম্বি দাগ। সামান্য শক্ত এই বাদামে আছে স্বাস্থ্য

almond

রক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় ফ্যাট, ফাইবার, প্রটিন ও ভিটামিন ই। এই বাদাম ব্লাড সুগার কমায়, ব্লাড প্রেশার ও কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে পারে। এটা ক্ষুধা বাড়ায় ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ওয়ালনাট দেখতে গোল, স্ট্র কালারের এবং শক্ত খোলশ দিয়ে ঢাকা। খোলশ ভাঙলে ভিতরে পাওয়া যাবে শাস। এটাই ওয়ালনাটের খাবার অংশ।

walnut

ওয়ালনাটে প্রদাহ প্রতিরোধী ওমেগা-৩, দরকারী ফ্যাটিএসিড আলফা-লিনোলেনিক আসিড হিসাবে থাকে। ওয়ালনাট এণ্টীঅক্সিডেণ্ট সমৃদ্ধ। এতে আছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ ও কপার। বি-ভিটামিন বায়োটিন ও মলিবডেনামের জন্যে একবার ওয়ালনাটের কথা মনে করতেই হবে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নিরোগ স্বাস্থ্য উপভোগ করতে হলে এই চার বাদামের স্মরণ করার কোন বিকল্প নেই।

কিভাবে খেতে হবে? উপরে বর্ণীত তিন প্রকার বীজ থেকে তিন চা-চামচ একটা ছোট পাত্রে আলাদা করুন। এর সাথে মিশান চার রকম বাদাম থেকে পরিমান মত বা সংগতি অনুসারে। এইবার সব একসাথে নাড়াচাড়া দিয়ে মিশিয়ে খেতে হবে। খাওয়া শেষে আধাগ্লাস হালকা গরম দুধ অথবা পানি পান করতে হবে। খাবার প্রণালী এইই।

চল্লিশের পরের স্বাস্থ্যের প্রকৃতি কি ও কেমন, তা এই পরিসরে আলোচনা করার অবকাশ নেই। তবে চল্লিশের পরের যে স্বাস্থ্য, তা সুসংহত করতে হলে উপরের প্রথম তিনটা বীজ ও পরের চার প্রকারের বাদামের একটা সম্মিলিত ডায়েট দারুন উপকার দেবে। দিনে এই (৩ +৪) খাওয়ার ব্যবস্থাটি গ্রহন করতে পারলে ভাল ফল ফলবে কোন সন্দেহ নেই। আমি নিজের উপরে এই ডায়েটারী সাপ্লিমেণ্ট সকাল আর সন্ধ্যার স্ন্যাক্সে পরীক্ষা করে উত্তম ফলাফল পেয়েছি।  

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s