লিখেছেন- ফারিসা মাহমুদ
আপনারা যারা রোকেয়া স্মরনি দিয়ে যাওয়া আসা করেন হয়ত খেয়াল করেছেন কয়েকজন হিজড়া ওখানে পথচারীদের থেকে টাকা উঠায়। গাড়ি, সিএনজি আটোরিক্সা, বাস ট্রাফিক সিগনালে থামলে এসে হাত পাতে। এই হিজড়াদের মধ্যে একজন আছে, মাথায় হিজাব পরে। খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই কেউ কেউ।
আমি কয়েকদিন দূর থেকে ওকে দেখেছি। কাল সন্ধ্যায় ও আমার কাছেই এসেছিলো। “মাগরিবের সময় কিছু না দিয়ে যেও না গো আপু। যা ইচ্ছে তোমার দেও, কিচ্ছু বলবো না।” ওর পোশাকে এবং আচরনে ইসলামি সংস্কৃতি। মনেমনে ওর একটা ছবি তুলে রাখতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু আমি পারিনি ওকে সেই কথা বলতে। আমি আবার লাজুক কি না ! আমার লজ্জাও আবার আজব বিষয়ে।
আগেই বলেছিলাম, হাফ পেন্ট পরতে বা গা দেখানোয় আমার লজ্জা করে না। আমায় দেখে যার কুচিন্তা আসে লজ্জা তো সে পাবে, তার নিজেকে সংযত করার দ্বায়িত্ব। আমার হিসাবে। অন্যের কুচিন্তা বন্ধ করতে এই গরমে আমি কেন ৩/৪ প্রস্থ কাপড়ে নিজেকে ঢাকবো ! বাঘের ভয়ে নিজেই খাঁচায় ঢুকতে রাজি না।
বলছিলাম পর্দানশীন হিজড়ার কথা । ও হয়ত পড়া লেখাই করে নাই বা ধর্ম সম্পর্কে জানেই না। হাওয়া যেদিকে সেদিকেই আচল উড়িয়েছে। তাই জানেই না, যে ধর্মকে সে আপন করেছে সেই ধর্মে ওর কোন স্থানই নেই। একদম কোন স্থানই নেই। আবাবিল নামে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পক্ষির উল্লেখ আছে কোরানে বা আরো অনেক পশু পাখিই বা আল্লাহর অতি নগন্য সৃষ্টির উল্লেখ হয়ত আছে কিন্তু হিজড়ার কোন উল্লেখই নেই। ওরা তাহলে কার সৃষ্টি ? শয়তানের প্রসঙ্গও তো আছে, তবে ওদের নেই কেন ? কোরান আল্লাহ প্রদত্ত মুসলিমের জীবন বিধান । সমস্ত বিধিবিধান কেবল নারী এবং পুরুষের জন্যে । ওরা নারী ও নয় পুরুষ ও নয়। ওরা কোন বিধান মানবে?
সম্ভবত, সে জালে আটকে গেছে। কোন কারনে ধর্মে অনুগত বা ধর্মপ্রেমি হিসাবে তালিকা ভুক্ত হয়েছে তো আজীবন এই তালিকায় তাকে থাকতেই হবে। অথবা ওর বুদ্ধিতে এসেছে যে ধর্মের দোহাই দিয়ে হলেও সে কিছু দান খয়রাত সে পাবে।দেশের প্রায় ৬০% মহিলাই তো পর্দা করে। সেচ্ছায়, চাপে পরে বা স্টাইল করে সে যেভাবেই হোক।
সেদিন আমি বাসে করে ফিরছিলাম গিলগাঁ থেকে। আমার পাশে একজন পর্দানশীন বসেছিলো। বাসে বসলে সাধারণত আমি ভাবনার জগৎ এ হারিয়ে যাই । আসে পাশে কিছুই খেয়াল থাকে না। খানিকক্ষন পরে দেখি পর্দানশীন বলছে, “ইশ কি সুন্দর ! কি মায়া লাগছে ! মাশায়াল্লাহ, মাশায়াল্লাহ ” ঘুরে দেখি এক,দেড় বছরের একটা বাচ্চা তার বাবার কোলে। বাবা স্মার্ট পেন্ট টিশার্ট পরে আছে দাড়িও নাই, কিন্তু বাচ্চা মেয়েকে পাজামা, জামা আর ছোট্ট একটুকরা কাপড় দিয়ে হিজাব পড়িয়েছে। এই হিজাব পড়া বাচ্চামেয়েকে দেখেই পর্দানশীন আ হাঃ উ হুঃ করছে। আমার দিকে তাকিয়ে আবার মহিলা বলছে, দেখেন বাবুটা হিজাব পড়েছে, কি মায়া লাগছে না? আমি গম্ভির হয়ে বসে আছি।
“তোমার নাম কি বাবু? মাশায়াল্লাহ, মাশায়াল্লাহ! আপা দেখেন, কি সুন্দর লাগছে না? ” এইবার কিছু না বলে থাকা যায় না। “না, বাচ্চাটার কস্ট হচ্ছে। এই গরমে বাচ্চাটাকে কস্ট দেয়া হচ্ছে। “
মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে সম্ভবত হাসলো। মুখ তো ঢাকা, হাসি দেখা যায় না। চোখ দেখে বুঝতে হয়। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। এর পরে মহিলা উঠে আমার পাশ থেকে অন্য সিটে যেয়ে বসেছিলো।
তো শিশুর হিজাব পরা দেখে এমন আনন্দিত হওয়া মানুষের মত মানুষও নেহায়েত কম না। এবং এমন আবেগপোষা মানুষ নিশ্চয়ই হিজড়ার হিজাব দেখেও আপ্লুত হয়ে টাকার বন্যা বইয়ে দিবে। এই ভরসায় বা বিশ্বাস থেকেই হয়ত সে হিজাব মাথায় দিয়ে হাত পাতছে।
আচ্ছা, লোভ বা স্বার্থ চিন্তা ছাড়া কি কোন ধার্মিক আছে ?