লিখেছেন- শেখ খলিল শাখা নির্ভানা
তার নাম স্মাইলি। জন্ম থেকে সে অন্ধ। কিছুই দেখতে পায় না। দুই বছর বয়স পর্যন্ত সব ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে হয়েছে। তার প্রতি বড্ড মায়া ধরে গেছে পালকের। সে যখন কারও কাছে আসে তখন মনে হয় সে হাসছে। তাই ঐ নাম- স্মাইলি। বেচারা প্রাণী। স্মাইলি একটা অন্ধ কুকুর। আস্তে আস্তে তার ভিতরে বহুবিধ গুনাবলী ফুটে উঠতে থাকে। অসুস্থ্য শিশুরা তার কাছে এসে সুস্থ্য হয়ে যায়। এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুরাও তার কাছে এসে ভাল বোধ করে, হাসিখুশি থাকে, তার সাথে খেলা করে। এইসব দেখে মানুষ বুঝে ফেলে স্মাইলি আসলে একটা থেরাপিউটিক ডগ। এরপর থেকে স্মাইলের কদর বাড়তে থাকে। বিভিন্ন হাসপাতালে তারা আসা যাওয়া বেড়ে যায়। অনকোলজি, জেরিয়েট্রিক, পেডিয়েট্রিক, মেন্টাল হেলথ ইত্যাদি বিভাগে সে নিয়িমিত ডিউটি দিতে থাকে। প্রভিন্সিয়াল এওয়ার্ড পায়। কিন্তু নিয়তির পরিহাস, বেশীদিন সে সেবা দিয়ে যেতে পারেনি। মরণব্যধি ক্যান্সার তাকে কাবু করে ফেলে। সেই রোগে ভুগে ভুগে এই গতকাল মারা গেল স্মাইলি।
সারা পৃথিবীর মানুষ সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে যায় স্মাইলির কথা। তার নামে ফেসবুকে পেজ খোলা হয়। চার্চে তার জন্যে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন চলে। অন্যান্য প্রদেশ থেকে কানাডার ওণ্টারিওতে অনেকে এসে ভীড় করে স্মাইলির পালকের সাথে দেখা করতে, তাকে সমবেদনা জানাতে, স্মাইলিকে শেষবারের মতন দেখতে। তারা তাজ্জব হয়ে যায়, একটা কুকুর কিভাবে মানুষের জন্যে এত কিছু করতে পারে। তাদের মনে কুকুর সম্পর্কে বড় ধারণা আছে তাকে আরো উচ্চে তুলে দেয় স্মাইলি। শুনছি স্মাইলির মুর্তি গড়া হবে পাবলিক প্লেসে।
আমরা উপমহাদেশের মানুষেরা বড্ড বেশী প্রিজুডিস। বাংলাদেশে কুকুর প্রজাতির বাস রাস্তায়। নোংরা খায়, ঘাটে। মানুষ দেখলে তেড়ে আসে, কামড়ায়। তাই কুকুর একটা অচ্ছুৎ প্রাণী, এই পূর্বধারণা আমাদের মনে বদ্ধমূল। তাইতো কুকুর একটা ভয়ানক গালি। কুকুর দেখলে তাই হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়ে মারি। স্মাইলির জীবনপঞ্জি কি আমাদের দেশের কুকুরদের মর্যাদা এতটুকু বাড়াতে পারবে? মনে হয় না। আমরা তো অনেক কিছুর ব্যাপারে প্রিজুডিজড। কেউ স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতিত হয়ে নারী বিদ্বেষী হয়, সারা দুনিয়ার নারীজাতিকে অভিসম্পাত দিতে থাকে। কেউ আবার স্বামী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়ে পুরুষ বিদ্বেষী হয়, সব পুরুষের মুণ্ডুপাত করে বেড়ায়। আমাদের সীমাবদ্ধতার সীমা পরিসীমা নেই। আমাদের বিষাক্ত পূর্বধারণা থেকে মানুষই বাঁচতে পারে না, সেখানে কুকুর বাঁচবে কেমন করে।
পূর্বধারণা বা প্রিজুডিস থেকে নিজেকে মুক্ত করা খুবই জরুরী। তবে তার জন্যে আবহ দরকার, সহায়ক সংস্কৃতি দরকার, কৌশল দরকার। যারা তা জানে তাদের কাছে যেতে হবে, তাদের কাছ থেকে শিখতে হবে।বড় জাতি হতে হলে এইসব করার কোন বিকল্প নেই। প্রিজুডিস থেকে মুক্ত হতে পারলে মানুষের জন্যে, প্রাণীর জন্যে, সৃষ্টির জন্যে অনেক বেশী কিছু করা যায়।