আমাদের শরীর ও মনের পরিচ্ছন্নতা


একটা দেশ সুন্দর হয় সকল মানুষের চেষ্টায়। একার পক্ষে যা সম্ভব নয় দশজনের পক্ষে তা সম্ভব। এই দশজন এক হবে কখন? যখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী হবে। এই সচেতনতা হলো শিক্ষা সচেতনতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, শিল্প বোধ এই সবই মানুষকে মানুষ করে তোলে। এই কানাডায় প্রতিটি মানুষই কর্মী। কোন কোন ডাক্তার তার প্রফেশনাল কাজের বাইরেও অনেক কিছু করে। সে তার চারপাশের মানুষকে সুস্থ্য ও সুখি রাখার জন্য রাস্তায় বের হয়ে দেখে যে কোথায় মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আছে। তার সেবা যত্নও সে করে। এটি কি ধরনের বোধ? জীবন বোধ। জীবনকে যারা ভালবাসতে শেখেনি তারা জীবনকে অবহেলা করে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। আজ সকালে দেখতে পেলাম এক বৃদ্ধ মাঠের মধ্যে কি যেন কুড়াচ্ছে। কাছে দিয়ে দেখতে পেলাম সে এই সকালে মাঠের সব গার্বেজ পরিষ্কার করার কাজে লেগেগেছে। এই কাজটি তার নয় তবুও সে এই কাজটি হাতে নিয়েছে। স্কুলের ছেলে মেয়েরা যেন মাঠটি আরো পরিষ্কার দেখতে পায়।

আমরা সমালোচনা খুব ভাল পারি কিন্তু নিজের দায়িত্ব বোধটি কোথায়ও দেখাতে পারি না। আর বড় ডিগ্রীধারী হলে তো আর কোন কথা নেই। আজীবন পা তুলে বসে থাকার চেষ্টা করি। আমাদের সমাজে লেখাপড়া জানা মানুষ কর্মী হলে মান সম্মান যেন থাকে না। শিক্ষার সাথে কর্মের যদি মিশ্রণ না থাকে তাহলে সেই লেখা পড়ার কোন দাম নেই। এবছর ঢাকা ভার্সিটির পিকনিকে যাই মেয়েকে নিয়ে। একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের এক বিখ্যাত সংবাদ পাঠিকা আমার মেয়ে দিয়ে উনার গার্বেজ ফেলালেন। আমার মেয়ে বাসা এসে আমাকে বলছে ” আম্মু উনাকে আমি চিনি না, উনার গার্বেজ আমাকে দিয়ে কেন ফেলালো?” আমি জানি উনি কেন এই কাজটি করেছেন। এই কানাডায় যারা যার ময়লা সে সে পরিষ্কার করে। এই কালচারটি এখনো তিনি শিখতে পারেননি। বাংলাদেশের কালচার দিয়ে বেশ চালাচ্ছেন। মানুষকে ছোট করার নানা উপায়ও তিনি ভালো জানেন। হায়রে আমাদের সমাজ সভ্যতা!! আর কতটা সময় পার করা লাগবে সভ্য হতে?

আমাদের শিক্ষার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। বাংলাদেশের শিক্ষিত লোকেরা কাগজ কলমের বাইরে কোন কাজ করতে চায় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না হলেই যেন তার দায়িত্ব আজীবন ময়লা পরিষ্কার করা। শুধু নিজের নয় পেশাধারী শিক্ষিত লোকের ময়লাও তাকে পরিষ্কার করতে হয়। এ কেমন সমাজ!! এটিই হলো শ্রেণি বিভাক্ত সাম্প্রদায়িক সমাজ। নিজের কাজটি নিজে করার মধ্যে গর্ব রয়েছে। আমি দেশে গেলে বাবার বাসার একটি ফ্লাটে থাকি। সেটি আমি না থাকলে বন্ধ থাকে। এবার দেশে গিয়ে দেখি ঠিক মত পরিষ্কার করেনি। ময়লা দেখে আমাদের যাত্রার সব ক্লান্তি সব পালিয়ে গেল। কাকে অভিযোগ করবো? কেন করবো? আমার যেখানে থাকতে হবে সেটাই আমার জায়গা। অতএব আমাকেই পরিষ্কার করতে হবে। দুই দিনের ক্লান্তিকর যাত্রা শেষে নিজের থাকার জায়গাটি পরিষ্কার করে কয় ঘণ্টা যে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম তা জানি না। কেউ নাকি নক করে আমাদের কোন সাড়া শব্দ পায়নি।

বাংলাদেশের ইয়ারপোর্টের বাথরুমে যাওয়া যায় না। চারিদিকে ময়লা আর যেখানে সেখানে নেপকিন ছড়ানো ছিটানো। পাশেই দাড়িয়ে রয়েছে একজন অস্বাস্থ্যকর পরিষ্কার কর্মী। শুধু কি তার দায়িত্ব এটি পরিষ্কার রাখা? যারা ব্যবহার করছে তারাই ঠিক মত জানে না কি ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়। একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী দিনে একবার পরিষ্কার করে চলে যাবে। তাকে বাথরুমের সামনে দাড়িয়ে থাকা লাগবে কেন? দুবাই ইয়ারপোর্টেও ঠিক এই ইস্টাইলটি দেখচ্ছি। পরিচ্ছন্ন কর্মীকে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকা মানে যারা ব্যবহার করছে তারা কি জানে না কী ভাবে জায়গাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়? একটা বাড়ির মানুষ সুস্বাস্থ্য কি না তা জানা যায় বাথরুম আর রান্না ঘরের চেহারা দেখলে। এই দুটি জায়গা সব চেয়ে বেশি পরিষ্কার করা লাগে নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য। আর আমরা কী দেখছি? এই দুটি জায়গা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সবচেয়ে বেশি অপরিষ্কার রাখতে অভ্যস্ত। এর কারণ জানি না।

মানুষের মনের সুস্থ্যতার জন্য অনেক ধরনের খাদ্য খাবার দরকার। সেই খাবারগুলো হলো শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য। এইগুলোই মানুষের মনকে শুদ্ধ করে মানবিক করে তোলে। সেই শিল্প সাহিত্যের চর্চা বাঙ্গালীদের মধ্যে কতটা দেখা যায়? এখন কিছু লোক দেখানো মহড়া চলে।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s